তোমার মুগ্ধতায় - (পর্বঃ ১)March 28, 2025 | তোমার মুগ্ধতায়
তালুকদার বাড়িতে শোকের ছাঁয়া পড়েছে। দু'তালা বিশিষ্ট্য পুরনো আমলের এই সুন্দর বাড়িটি তে আজ বাঁধ ভাঙা কান্নার ঢেউ। তালুকদার বাড়ির ছোট ছেলে জাহিদ তালুকদার গতকাল রাতে ইন্তেকাল করেছে। রাতে খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর হঠাৎই বুকে ব্যাথা শুরু হয় জাহিদের। স্ত্রী রাহিলা স্বামীর এ অবস্থা দেখে চিৎকার করে ডাকে বাড়ির লোকজনদের। বাড়ির লোকেরা ততক্ষণাত জাহিদকে হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু মৃত্যু বোধয় জাহিদের সহায় ছিল। তাইতো অভাগী স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে মুসকানকে রেখে অকালে মৃত্যু বরণ করে জাহিদ। হসপিটালে নেওয়ার পথে রাস্তায়ই মা*রা যায় সে। আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে একদম ভেঙে পরেছেন এরশাদ তালুকদার । উনার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র ছিল জাহিদ তালুকদার। যে ছেলে কখনো কোনোদিন উনার কথা অমান্য করেনি, উনার চোখেচোখ তুলে কথা ব'লেনি, উনি যা হুকুম করেছেন নির্দ্বিধায় পালন করেছে, সবসময় উনার সাথে মাথা নুইয়ে কথা বলেছে। মানুষ বলে পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তানরা ঘাড় ত্যাড়া হয়। বেশি চঞ্চল থাকে। বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়। কিন্তু জাহিদ ছিলো পুরো তার উল্টো। সে কখনো এরশাদ তালুকদারের সাথে গলা উঁচিয়ে কথা বলেছে কিনা জানেন না তিনি ।
বাবা এরশাদ তালুকদারের নির্দেশেই স্ত্রী রাহিলা কে বিয়ে করে জাহিদ। রাহিলার বাবা ছিল এরশাদ তালুকদারের খামারের একজন সাধারণ কর্মচারী। রূপে গুণে রাহিলা ছিলো যথেষ্ট সুন্দরী। কিন্তু টাকার অভাবে মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারছিলেন না রাহিলার বাবা। এরশাদ তালুকদার নিজে রাহিলার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রেখে রাহিলাকে ছোট ছেলের বউ করে নিয়ে আসেন। আজ সেই মেয়েটিকে বিধবা বানিয়ে চলে গেলো উনার ছেলে।
উঠানের এককোনায় বড়োই পাতার গরম পানি করা হচ্ছে। অন্যপাশে জাহিদের শেষ গোসলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। উঠানের ঠিক মাঝ বরাবর বড় আম গাছটার নিচে খাঁটিয়ায় জাহিদের দেহখানা শুয়িয়ে রাখা । জনে জনে মানুষ এসে শেষবারের মতো জাহিদের মুখটা দেখে যাচ্ছে। মানুষ জনের মুখে হায় আফসোসের শেষ নেই। গ্রামের প্রতিটি মানুষ জাহিদের অকাল মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোকাহত। তালুকদার বাড়ির আনাচে কানাচে আজ মানুষে গিজগিজ করছে। বাড়ির ভিতর থেকে কান্নার তীব্র ধ্বনি ভেসে আসছে। ভেসে আসছে কোরআন তিলাওয়াতের সুর। ছেলের লা*শের পাশে বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বৃদ্ধ এরশাদ তালুকদার। রাত থেকে কাঁদতে কাঁদতে ওনি অসুস্থ হয়ে পরেছেন। কিন্তু তবু্ও ছেলের পাশ থেকে কেউ ওনাকে একচুলও নাড়াতে পারেননি।
এরশাদ তালুকদারের তিন পুত্র এক কন্যা। সবচেয়ে বড় পুত্র জহির তালুকদার। যিনি বর্তমানে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় থাকেন। মেজো পুত্র জামিল তালুকদার যে এখন গ্রামের মাদবর । মেয়ে জিন্নাত তালুকদার এবং কনিষ্ঠ পুত্র জাহিদ তালুকদার।
এরশাদ তালুকদার খুবই রাগী আর কঠোর মানুষ। উনার মুখের উপর কথা বলার সাহস কারো নেই। কিন্তু আজ প্রিয় ছেলের আকস্মিক মৃত্যুতে এরশাদ তালুকদার নিজের কঠোরতা ধরে রাখতে পারেননি। সকলের সামনে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করেছেন। বাবা হয়ে ছেলের লা*শ দেখা যে কতটা পীড়াদায়ক তা এরশাদ তালুকদার প্রবল ভাবে উপলব্ধি করতে পারছেন। এরশাদ তালুকদারের প্রতিটা ছেলে মেয়ে উনাকে যমের মতো ভয় পায় সাথে যথেষ্ট মান্যও করে। শুধু উনার ছেলে মেয়েরাই না। এই গ্রামের প্রতিটি মানুষই এরশাদ তালুকদারকে মান্য করে চলে। একটা সময় গ্রামের মাদবর ছিলেন এরশাদ তালুকদার । বর্তমানে যেটা উনার মেজো ছেলে আছেন। ছোটো ছেলে জাহিদ উনার খামার গুলোর তদারকি করতো। আর বড়ছেলে! তাকে এরশাদ তালুকদার বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন অনেক বছর আগে। 'কারণ একটাই, জহির উনার শত্রুর মেয়ে তাজমহল কে ভালোবেসে ছিলো। যা এরশাদ তালুকদার মানতে পারেননি। এরশাদ তালুকদার কখনোই নিজের শত্রুর মেয়েকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিবেন না। আর সবচেয়ে বড়কথা জহির উনার হুকুমের অবাধ্য হয়ে তাজমহল কে বিয়ে করেছিল। যার জন্য সেদিনের পর থেকে এরশাদ তালুকদার উনার বড় ছেলের মুখও দর্শন করতে চান নি। জহির হাজার বার তার বাবার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে। বাবার রাগ ভাঙাতে চেয়েছে। কিন্তু এরশাদ তালুকদার অটল ছিলেন। ক্ষমা করেননি বড় ছেলেকে। এমনকি উনার বাড়িতে আসার পারমিশনও দেননি। বাবার ঘৃণা সহ্য করতে না পেরে আজও কাঁদে জহির।
" বর্তমানে ঢাকার একটা নামি-দামি ইন্ডাস্ট্রির মালিক জহির। তাঁর এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে বড়। নাম ফারিশ তালুকদার। যে বড়মাপের একজন আর্কিটেকচার। মেয়ে ফাইজা। এবার ক্লাস টেনে পড়ে। স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে লাস্ট একবার তালুকদার বাড়িতে এসেছিলো জহির। সেটা হচ্ছে পাঁচ বছর আগে তার মা রেণুর মৃত্যুর দিন। সেদিন শুধু মায়ের কবরে মাটি দিয়ে চলে গিয়েছিল জহির। আজ পাঁচ বছর পর আবার আসছে জহির ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ শুনে। "
__________
গাড়ির উচ্চ স্বরে উঠানের সকল মানুষ সেদিকে তাকায়। প্রায় পাঁচ বছর পর তালুকদার বাড়ির বড় ছেলে জহির এসেছে বাড়িতে। জহিরের সাথে তার একমাত্র ছেলে ফারিশ, মেয়ে ফাইজা এবং স্ত্রী তাজমহলও এসেছেন। জহির গাড়ি থেকে নামা মাত্রই দৌড়ে এসে তার বাবার পাশে মাটিতে বসে পরলো। কান্নায় লুটিয়ে পরলো আদরের ছোট ভাইয়ের লা'শের পাশে। জহিরের চোখের মণি ছিল জাহিদ। ছোট বেলায় জাহিদের সকল আবদার পূরণ করতো জহির। ভাইকে কাঁধে নিয়ে ঘুরতো,মায়ের মা'র থেকে বাঁচাতো, ভাই যা চাইতো তাই দিতো। সেই আদরের ভাই আজ তার চোখের সামনে লা*শ হয়ে খাঁটিয়ায় শুয়ে আছে। এটা কীভাবে মেনে নিবে জহির। না একদম স'হ্য করা যায় না একদমই না। বড় ভাইবোন রেখে, বৃদ্ধ বাবাকে রেখে জাহিদ কিভাবে চলে যেতে পারে! মাটির মধ্যে চাপড় মে'রে মে'রে হায় হুতাশ করে কাঁদতে লাগলো জহির। ভাইয়ের খাটিয়ায় জোরে জোরে কপাল ঠুকে চিৎকার করতে লাগলো। নিজের চুল টানতে লাগলো সমানে।এরশাদ তালুকদার ছেলের এমন পাগল করা কান্নায় আর কঠোর থাকতে পারলেন না। এতো বছর পর বড় ছেলেকে দেখে আর ছেলের এভাবে কান্না দেখে তিনি জহিরকে বুকে টেনে নিলেন। বাপ ছেলে মিলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বাঁধ ভাঙা কান্নায় ভেঙে পরলেন। জামিল এতোক্ষণ নিজেকে শক্ত রাখলেও এখন আর পারলো না। সেও বাপ ভাইকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। গ্রামের মানুষও তাদের কান্নায় কাঁদতে লাগলো। এরশাদ তালুকদার একটানা এতো কাঁদার ফলে ভিষণ অসুস্থ হয়ে পরলেন। এতটাই অসুস্থ হয়েছেন যে উনি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরলেন। জামিল আর গ্রামের মানুষ মিলে এরশাদ তালুকদারকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যান। জহিরও অনেক দুর্বল হয়ে পরেছে। তাঁর ছেলে ফারিশ এসে তাকে সামলায়। ফারিশ তার বাবাকে কাঁধে করে ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে শুইয়ে দিল। তার মা তাজমহল আর বোন ফাইজাকে বাবার খেয়াল রাখতে বলে আবার উঠানের দিকে হাঁটা ধরল। জাহিদ কে গোসলে নিবে এখন। জামিলের অবস্থাও তেমন ভালো না। বাড়ির বড় নাতি হিসেবে তার সেদিকটায় খেয়াল রাখা উচিৎ ।
__________
-------'আম্মা আব্বার কি হইছে আম্মা?' আম্মা আমার আব্বারে বাইরে কেন শোয়ায় রাখছে আম্মা? আমাকে ছাড়তে বলেন ! আমি আমার আব্বার কাছে যাবো! আম্মা আমার আব্বারে কাফনের কাপড় পরাচ্ছে আম্মা! সহ্য হচ্ছে না আম্মা আমার! আম্মা আমার অন্তর ফাইট্টা যাইতেছে আম্মা! দয়া করে আমারে বাইরে যেতে দেন আম্মা।
পরক্ষনে চিৎকার দিয়ে বলল,
" এইইই আমাকে ছাড়েন আপনারা!" দয়া করে আমাকে আমার আব্বার কাছে যাইতে দেন! আমি আপনাদের পায়ে পড়ি আমাকে আমার আব্বার কাছে যাইতে দেন। ওরা আমার আব্বারে নিয়া যাবে। আমার আব্বারে মাটিতে পুঁতে রাখবে। আমি দিবোনা। আমি কিছুতেই আমার আব্বারে নিয়া যাইতে দিবোনা! আমার আব্বা মাটিতে ঘুমাতে পারবে না.........
মুসকানের আত্মচিৎকারে রুমে থাকা প্রতিটি মানুষের দেহ শিউরে উঠছে। রাহিলা মেয়ে কে বুকে চেপে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বলছে,,
-- তোর আব্বা আর আসবো নারে মা! আর কোনো দিনও আসবো না! আমাদের ধোঁকা দিয়ে চলে গেছে তোর আব্বা! আল্লাহ নিয়ে নিছে উনারে..
মা মেয়ে একে অপরকে জরিয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছে। তাদের কান্না দেখে রুমে থাকা প্রতিটি মানুষ কাঁদছে। মুসকানকে চেপে ধরে রেখেছে সকলে। মুসকানের মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে তাকে থামানোর চেষ্টা করছে।
উঠানের দিকে যেতে নিয়ে একটা ঘর থেকে আসা চিকন কান্নার স্বরে পা থেমে যায় ফারিশের। না চাইতেও সেদিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা মেয়ের উপর চোখ আটকে যায় তার। মুসকানের বলা প্রতিটা কথা ফারিশের বুকে এসে লাগে। চোখে পানি জমে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। বাবার এভাবে কান্নাও ফারিশের চোখে পানি জমাতে পারেনি যেটা এই ছোট মেয়েটার আত্মচিৎকারে জমেছে। কতোটুকুই বা বয়স হবে মেয়েটার। শুনেছেতো তার বোন ফাইজার সমবয়সী। এতোটুকু বয়সে বাবার মৃত্যুর ধাক্কা কীভাবে মেনে নিবে মেয়েটা। ফারিশ তাকিয়ে দেখে মুসকান জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। রুমে মানুষে গিজগিজ করছে। তালুকদার বাড়িতে না আসলেও এই বাড়ির প্রতিটি সদস্যকে চেনে ফারিশ। কিছু না ভেবে সে মুসকানের রুমে ঢুকে পরলো। রুমে থাকা মানুষগুলোর উদ্দেশ্যে গম্ভীর স্বর প্রয়োগ করল,
--- ' আপনারা এখানে এভাবে ভীড় জমিয়ে রেখেছেন কেন? প্লিজ রুমটা খালি করে দিন সকলে। ওকে স্পেস দিন। এভাবে ভীড় জমিয়ে রাখলেতো ওহ শ্বাস আটকেই ম'রে যাবে। '
ফারিশের গম্ভীর কণ্ঠ শুনে মহিলারা একে একে রুম থেকে বের হয়ে যেতে লাগলো। জামিলের ওয়াইফ শিল্পী ফারিশকে জিজ্ঞেস করলো,
-- জাহিদ ভাইয়ের গোসল কি শেষ হয়েছে ফারিশ? আসলে মুসকান বারবার ওর আব্বাকে দেখতে চাচ্ছে। বাইরেতো প্রচুর মানুষ যদি একটু দেখার ব্যবস্থা করে দিতে? আরতো কোনোদিন দেখতে পারবেনা! শেষবারের মতোই নাহয় বাবাকে দেখে আসুক মেয়েটা। চিরবিদায় দিয়ে আসুক। এতটুকু বলে শাড়ির আঁচলে মুখ চেপে কেঁদে দিলেন শিল্পী।
ফারিশ মুসকানের দিকে শীতল চোখে তাকালো। মায়ের বুকে জ্ঞান হারিয়ে নির্জীব পরে আছে মুসকান। অতিরিক্ত কাঁদার ফলে চোখ মুখ ফুলে ফেঁপে আছে। নাকটা টকটকে লাল । চোখের নিচে বেয়ে পরা অশ্রুর ছাপ স্পষ্ট ভাসছে। রাহিলারও একই অবস্থা। মেয়েকে বুকে আগলে জড় পদার্থের মতো বসে আছেন তিনি। তাদের ওপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল ফারিশ। মেজো চাঁচি শিল্পীর উদ্দেশ্যে বলল,
--- আপনি মুসকানের জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করেন চাচি। জাহিদ চাচার গোসল সম্ভবত শেষ। আমি বাইরে গিয়ে দেখছি উনাকে দেখানোর ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
শিল্পী চোখের পানি মুছে বলল,
-- আচ্ছা বাবা।
__________
জাহিদ কে সাদা কাফনের কাপড়ে মুরিয়ে উঠানের মাঝে শুইয়ে রেখেছে। বাবা, ভাই, বোন, পাড়াপ্রতিবেশি শেষ বারের মতো প্রাণ ভরে জাহিদের সুন্দর মুখখানা দেখছে। এরশাদ তালুকদারকে কেউ ভিতরে আটকিয়ে রাখতে পারেননি। ছেলেকে শেষ বিধায় জানাতে ছোটে চলে এসেছেন। মুসকান কে তাঁর চাচি আর চাচাতো বোন তানিয়া ধরে বাহিরে নিয়ে এসেছে। সে ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছে না। ঢ'লে পরে যাচ্ছে। এরশাদ তালুকদার নাতনির দিকে এক পলক তাকিয়ে উচ্চ স্বরে কেঁদে ওঠেন। উনার ময়াবী মুখশ্রীর নাতনিটার চেহারার এই কি হাল হয়েছে। চোখ গাল ফুলে একাকার অবস্থা। চেহারাই চেনা যাচ্ছে না। জাহিদের খাঁটিয়া কাঁধে তুলে রওনা দেওয়ার সময় মুসকান আকাশ কাপিয়ে চিৎকার করে উঠে। তার চাচাদের বাঁধা দেয়। তার বাবাকে নিয়ে না যাওয়ার জন্য মিনতি করে। মুসকানের পাগলাটে আচরণ কেউ বন্ধ করতে পারছে না। এরশাদ তালুকদার নাতনিকে শক্ত করে বুকে চেপে ধরে ছেলেদের জাহিদের খাটিয়া নিয়ে যেতে হুকুম করেন। মুসকান তার দাদুর বুকে থেকে চিৎকার করে কান্না করছে আর বলছে,
--- 'আমাকে ছাড়ো দাদু! আব্বারে নিয়ে যাইতেছে আমাকে ছাড়ো! আমি আমার আব্বারে কোথাও যাইতে দিবোনা। দাদু তুমি আটকাও ওদের। আমার আব্বা আমাদের ছাড়া থাকতে পারবে না দাদু !!! কাঁদতে কাঁদতে জান ছেড়ে মাটিতে বসে পরলো মুসকান। এরশাদ তালুকদার অন্যদের ইশারায় বলেন মুসকান কে ঘরে নিয়ে যেতে। ছেলের জানাজায় যাবেন উনি। পৃথিবীর সবচাইতে ভারী বস্তুু হচ্ছে বাবার কাধে ছেলের লা*শ। একজন বাবার কাছে যেটা মরণ যন্ত্রণার চাইতেও অধিক। এরশাদ তালুকদারের কথায় সকলে মিলে মুসকান কে জোর করে ঘরে নিয়ে যেতে লাগলো। মুসকানের এই ভয়ংকর কান্না আজ পুরো গ্রাম বাসিকে কাঁদিয়েছে।
___________
এরশাদ তালুকদারের প্রিয় নাতনি মুসকান তালুকদার। খুব স্নেহ করেন উনি মুসকান কে। সব নাতি নাতনিদের থেকে উনি মুসকানের খেয়ালটা যেন একটু বেশিই রাখেন। তালুকদার বাড়ির সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে মুসকান। চোখ ধাধানো তার সৌন্দর্য। মুসকানের রূপ দেখে প্রশংসা করেনি এমন মানুষ গ্রামে খুব কমই আছে। সবাই বলে মুসকান নাকি তার দাদি রেণুর রূপ পেয়েছে। মুসকানের দাদি রেণু ছিল ভয়ংকর সৌন্দর্যের অধিকারী। তালুকদার বাড়ির আর কোনো মেয়েই মুসকানের মতো এমন রূপ পায়নি। এমনকি রেণুর ছেলে মেয়েরাও না। এরশাদ তালুকদার মুসকানের মধ্যে নিজের স্ত্রীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান। সেই জন্যই বোধয় মুসকান কে এতোটা ভালোবাসেন তিনি। এমনকি মুসকান কে মাঝেমধ্যে রেণু বলে সম্মোধনও করেন। জাহিদতো কখনো মুসকানকে মা ছাড়া ডাকই দিতোনা। মুসকান এবার ক্লাস টেনে পড়ে। জহিরের মেয়ে ফাইজার এক মাসের ছোট মুসকান। জামিলেরও দুই ছেলে মেয়ে। বড় হচ্ছে মেয়ে তানিয়া। যে ফারিশের থেকে দু'বছরের ছোট। তানিয়ার কবেই বিয়ে হয়ে গেছে। যমজ দুটো মেয়েও আছে। মিন্নি আর তিন্নি। এরা দুটো এখন ক্লাস ওয়ান এ পড়ে। জামিলের ছেলের নাম রাতুল। সে মুসকানের একবছরের ছোট। এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। মুসকানের ফুপিমণি জিন্নাতেরও দুই ছেলে মেয়ে। ছেলে রিশাদ আর মেয়ে রিতা। রিশাদ আর তানিয়া অনেকটা সমবয়সী। রিতা মুসকান আর ফাইজা থেকে দু'বছরের বড়।